গ্লোমি সানডে : একটি মৃত্যুর গান

খুশিতে হোক বা অবসাদে, গান আমাদের জীবনে জড়িয়ে আছে প্রতিনিয়ত প্রতিটা মুহূর্তে। মনখারাপের সময়টাতে গান শুনতে যেমন ভালো লাগে, তেমনি মনভালো থাকলেও সঙ্গী হয় গান। এমন একটা গান আছে যেটি মানুষের মনে উসকে দেয় আত্মহত্যার ভাবনা। “ গ্লোমি সানডে “নামে পরিচিত এ গানটি শুনে শতাধিক মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। এমনকি গানটির রচয়িতা স্বয়ং শিকার হয়েছেন রহস্যজনক মৃত্যুর। চলুন তাহলে জেনে আসি একটু বিস্তারিত…

গানটি নিয়ে আর কিছু বলার আগে দেখে আসা যাক কি ছিল সেই গানের কথায়।

Sunday is gloomy, my hours are slumberless

Dearest the shadows I live with are numberless

Little white flowers will never awaken you

Not where the black coach of sorrow has taken you

Angels have no thought of ever returning you

Would they be angry if I thought of joining you?

Gloomy Sunday

Gloomy is Sunday, with shadows I spend it all

My heart and I have decided to end it all

Soon there’ll be candles and prayers that are sad I know

Let them not weep let them know that I’m glad to go

Death is no dream for in death I’m caressing you

With the last breath of my soul, I’ll be blessing you

Gloomy Sunday

Dreaming, I was only dreaming

I wake and I find you asleep in the deep of my heart, here

Darling, I hope that my dream never haunted you

My heart is telling you how much I wanted you

Gloomy Sunday

বিগত শতাব্দীর ত্রিশের দশক। গ্রেট ডিপ্রেশনের যুগ। ইউরোপ সহ সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। আর্থিক অনটনের কারণে হতাশা বাড়ছে সমাজের সকল শ্রেনীর লোকজনের মাঝে। সাময়টা ১৯৩২ সাল প্যারিসে বসে গ্লোমি সানডে গানটি লিখেছিলেন হাঙ্গেরিয়ান পিয়ানোবাদক এবং সঙ্গীত রচয়িতা রেজসো সেরেস, কারো কারো মতে জায়গাটি প্যারিস নয়, বুডাপেস্টও হতে পারে।

প্রথমে এর নাম দেওয়া হয় “Vége a világnak” (“End of the world” )। তবে পরে এর নামকরণ করা হয় “Szomorú vasárnap” বা ‘Sad Sunday’ হিসেবে।

এই গানটিই পরে সারা পৃথিবী জুড়ে ‘সুইসাইড সং’ বা ‘আত্মহননের সংগীত’ নামে বিখ্যাত হয়। ৩৪ বছর বয়সী সেরেস তখন একটুখানি সাফল্যের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছিলেন। গান নয়, মূলত কবিতা হিসেবেই প্রথম রচিত হয় গ্লোমি সানডে। পিয়ানোর সি-মাইনর মেলোডির সাথে কম্পোজিশন করা হয় কবিতাটির।

গানটি কে এবং কেন লিখেছিলেন তা নিয়ে আজ অবধি জল কম ঘোলা হয়নি। রেজসো সেরেসকে যদিও গানটির রচয়িতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়, তা সত্ত্বেও গানটির পেছনের কাহিনী হিসেবে একাধিক মতভেদ রয়েছে। সবচেয়ে প্রচলিত মত অনুযায়ী জানা যায়, মামলা-মোকদ্দমার ফেরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন সেরেস। তাকে স্বান্তনা দিতে একটি কবিতা লিখে পাঠান ছোটবেলার বন্ধু লাজলো জেভার। সেই কবিতাটি সেরেসের অন্তর ছুঁয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে পিয়ানোর সাহায্যে সুর দিয়ে এটিকে গানে রুপান্তরিত করেন সেরেস। অন্য একটি মত অনুযায়ী, সেরেসের হাত দিয়েই রচিত হয় গ্লোমি সানডে।

আবার অপরদিকে জানা যায়, প্রেমিকা সেরেসকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তিনি এতটাই ভেঙ্গে পড়েন যে সুর করে ফেলেন গ্লোমি সানডের মতো মন খারাপ করা গান। সেরেস তার অন্তরের সমস্ত বেদনা একত্রিত করে ঢেলে দিয়েছিলেন এই গানটির প্রতিটি সুরে। আর সে কারণেই অচিরেই তার বিষণ্ণতা ছুঁয়ে গিয়েছিল গীতিকার লাজলো জাভোরকে।

এবারে প্রশ্ন, সত্যিই কি এই গান আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়? এই গানটি রেকর্ড করেছিলেন প্যাল ক্যামার। সেই রেকর্ডিং প্রকাশিত হওয়ার পরেই হাঙ্গেরিতে পরপর আত্মহত্যা ঘটতে থাকে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর এবং পুলিশের কাছে তথ্য একত্র করলে দেখা যাবে, হাঙ্গেরি এবং আমেরিকায় সেই সময়ে অন্তত ১৯টি আত্মহত্যার সঙ্গে এই গানটির যোগসূত্র ছিল। গানটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৬৮ সালে ঘরের জানলা দিয়ে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করেন সেরেস নিজে।

এখানেই দাঁড়ি শেষ হয়নি আত্মহত্যায়। এর পরেও খবর আসতে থাকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। জার্মানি, ইংল্যান্ড, হাঙ্গেরি- সর্বত্র আত্মহত্যার সঙ্গে জড়িয়ে যায় গানটি। গ্লোমি সানডে গানটি আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ৪০এর দশকে বিবিসি বিলি হলিডের সংস্করণটি প্রচার বন্ধ করে দিয়েছিল। ২০০২ সালে এসে গানটির উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে রেডিও চ্যানেলগুলো।

গ্লোমি সানডে গানটিকে ভিত্তি করে ইহুদিদের উপর নাৎসিদের অত্যাচার এবং একটি ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী নিয়ে একই নামে ১৯৯৯ সালে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন পরিচালক রলফ সুবল। এখানে তিনি ইতিহাস এবং ফিকশনের মধ্যে একটি সমন্বয় ঘটিয়েছেন।

সর্বশেষ আমরা বলতে পারি, এই গানটির প্রভাবে আসলেই মানুষ আত্মহত্যা করেছে কিনা তা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। অনেক প্রেস রিপোর্ট অনুযায়ী গানটি প্রকাশনার সময়কালে হাঙ্গেরিতে ১৯টি আত্মহত্যা প্রমাণ পাওয়া যায়, কিন্তু সেগুলোর পিছনে এই গানের প্রভাব সম্পর্কে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই আত্মহত্যা গুলোকে অনেকে গ্রেইট ডিপ্রেশানের প্রভাব বলে মনে করেন। আবার অনেকে মনে করেন, এটি ছিল গানটিকে জনপ্রিয় করার কৌশল হিসেবে ছড়ানো গুজব। তারপর বলুন আপনি কি মনে করেন? মতামত জানান আমাদেরকে ।

Originally published at https://www.writersgild.com.

--

--

The difference between me and them is that I keep going when it becomes hard.

Get the Medium app

A button that says 'Download on the App Store', and if clicked it will lead you to the iOS App store
A button that says 'Get it on, Google Play', and if clicked it will lead you to the Google Play store
Khairul71

The difference between me and them is that I keep going when it becomes hard.